Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সবজি ও শোভার জন্য শাপলা

সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। নীল শাপলা শ্রীলংকার জাতীয় ফুল ও সাদা শাপলা ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্য ফুল। জাতীয় ফুল হলেও এদেশে শাপলা এক অবহেলিত উদ্ভিদ। প্রাপ্ত বিভিন্ন জীবাশ্ম সাক্ষ্য দেয়, আজ থেকে প্রায় ১৬ কোটি বছর আগেও পৃথিবীর বুকে শাপলা গাছের অস্তিত্ব ছিল। প্রাচীন মিসরে সাদা ও নীল শাপলার আদি অস্তিত্বের প্রমাণ রয়েছে। আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়ার বহুদেশে শাপলা জন্মে। আমেরিকা ও ইংল্যান্ডেও শাপলা আছে। এ দেশের প্রায় সর্বত্র জলে-ডোবায়, বিলে-ঝিলে, পুকুরে-খালে শাপলা জন্মে থাকে। শাপলা ফুল দেখতে খুবই সুন্দর। শোভাবর্ধক গাছ হিসেবে তাই জলজ উদ্যানে লাগানো হয়। এর কন্দ ও পুষ্পনাল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।
 

গাছের পরিচয়
সারা বিশ্বে প্রায় ৫০-৬০ প্রজাতির শাপলা আছে। আমাদের দেশে সাদা শাপলা (Nymphaea alba, Nymphaea pubiscence), লাল শাপলা (Nymphaea rubra), নীল শাপলা (Nymphaea nouchali ও Nymphaea capensis) ও হালকা নীল শাপলা (Nymphaea stellata) দেখা যায়। দুর্লভ হলুদাভ শাপলাও (Nymphaea amazonum) মাঝে মাঝে কোথা কোথাও দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সাদা শাপলা। এরপর পাওয়া যায় লাল শাপলা  এবং নীল শাপলার বিচরণক্ষেত্র সীমিত। হালকা নীল শাপলা মাঝে মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে নোয়াখালী, খুলনা, সাতক্ষীরা, সিলেট প্রভৃতি এলাকায় দেখা যায়।


শাপলা একটি জলজ বিরুৎ। একবার কোথাও জন্মালে তার মূল সম্পূর্ণ না উঠানো পর্যন্ত সেখানে গাছ জন্মাতে থাকে। গাছের কন্দ বা মোথা জলের তলে মাটি বা কাদায় থাকে, পাতা জলের উপরে ভাসতে থাকে, নলের মতো পত্রনাল ও ফুলের লম্বা বোঁটা জলের ভেতরে থাকে, ফুল ফোটে জলের উপরে। জল পেলে পত্রনাল ২-৩ মিটার লম্বা হতে পারে। পুষ্পনাল ও পত্রনালের ভেতরে অনেকগুলো ফাঁপা নল থাকে। পুষ্পনাল বা ফুলের বোঁটাকে স্থানীয় ভাষায় ‘নাল’ বা ‘নাইল’ বলে। পাতা গোলাকার হলেও বোঁটার দিকটা হৃৎপিণ্ডকার, পাতার কিনারা ঢেউ খেলানো। ফুল দেখতে অনেকটা পদ্মফুলের মতো। তবে পাপড়ি পদ্মফুলের চেয়ে চিকন ও শক্ত। ফুল দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। বসন্তের শেষ থেকে শরতের প্রথম পর্যন্ত ফুল ফুটলেও বর্ষাকালে বেশি ফোটে। গাছের সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি ঘটে বর্ষাকালে। সাদা শাপলা ফুল ফোটে রাতে, দিনে বুজে যায়। এজন্য সাদা শাপলাকে বলে কুমুদ।  লাল ও নীল শাপলা ফুল ফোটে দিনে। ফলগুলো স্পঞ্জের মতো ফাঁপা, সবুজ ও গোলাকার, অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় ভেসে থাকে, পাকলে ফল ফেটে যায়। ফলের মধ্যে অনেকগুলো কোষ থাকে। সেসব কোষে প্রচুর বীজ থাকে। বীজের রঙ কালো বা বাদামি, ক্ষুদ্র, ব্যাস প্রায় ১ মিলিমিটার।


পুষ্টিমূল্য
শাপলা গাছের বিভিন্ন অংশের পুষ্টিমান বিভিন্ন রকম। জলীয় উপাদান সবচেয়ে বেশি থাকে মোথা বা কন্দে (২০.৪%) ও সবচেযে কম থাকে বীজে (৪.১৮%)। ফ্যাট বেশি থাকে বীজে। প্রোটিন সবচেয়ে বেশি আছে পাতায় (২৫.৪%) ও সবচেয়ে কম আছে নাইলে (১০.০%)। খাদ্য আঁশ আছে ৯.৫-১৫.১%। নাইলে খনিজ উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে পটাশিয়াম (১.৫৬- ৪.৬৩%) ও সোডিয়াম (১.৯-৪.২১%)। এ ছাড়া রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে  ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন ও সোডিয়াম।


ব্যবহার
প্রাচীনকাল থেকে শাপলা মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষত দুর্ভিক্ষের সময় শাপলা খাদ্য হিসেবে অনেক মানুষের জীবন বাঁচায়। আফ্রিকায় অনেকে তাদের স্থানীয় বুনো শাপলার মোথা খায়। খাদ্যের জন্য আফ্রিকায় কেউ কেউ শাপলার চাষ করে। মোথা বা কন্দ অনেক দেশে সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়, সালাদেও খাওয়া হয়। মোথা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সবজি হিসেবে এদেশে পুষ্পনাল বা ফুলের বোঁটাকে পল্লী অঞ্চলে ব্যাপকভাবে খাওয়া হয়। নাইলের খোসা তুলে তা টুকরো করে কেটে চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না করলে অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। সরষে ফোঁড়নে নারকেল দিয়েও রান্না করা হয়। নাইলের কাটা টুকরো নারিকেল পাতার শলা বা টুথপিক দিয়ে গেঁথে ভেলার মতো বানিয়ে তা বেসন বা চালের গুঁড়ো দিয়ে মেখে তেলে ভেজে বেগুনির মতো খাওয়া হয়। সাদা শাপলা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। লাল ও নীল শাপলা সাধারণত খাওয়া হয় না।


ভেষজ গুণ
পল্লী অঞ্চলে একসময় শাপলা গাছের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো। এর শুকনো ফুলের গুঁড়ো ঠাণ্ড ও কষায় উপকার করে। কলেরা, জ্বর ও যকৃতের অসুখ সারাতে শাপলার ফুল ব্যবহৃত হয়। বীজ বিভিন্ন চর্মরোগ এমনকি কুষ্ঠ রোগের ঔষধ। ডাঁটা বা নাল খেলে পাকস্থলী থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। তবে সবচেয়ে উপকারী হলো শাপলা মোথা বা মূল। অর্শ, অজীর্ণ, শুক্রতারল্য ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে মোথা কাজে লাগে।


বংশবৃদ্ধি
দুভাবে শাপলার বংশবৃদ্ধি ঘটে- বীজ থেকে ও অঙ্গজ উপায়ে। শাপলা ফুল ফোটার পর ৩-৪ দিনের বেশি তা থাকে না। ফোটার প্রথম দিনেই ফুল থেকে এক ধরনের মিষ্টি সুগন্ধ বের হয় যা পরাগায়ণকারী বিভিন্ন পতঙ্গদের আকৃষ্ট করে। ফুলের সৌন্দর্য ও সৌরভে আকৃষ্ট হয়ে পোকারা ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় ও পরাগায়ণ ঘটায়। ফুল ফাটার পরের দিন পুরুষ স্তবক পরাগরেণু উৎপাদন করে যা এসব পোকাদের দ্বারা বাহিত হয়ে স্ত্রীকেশরের গর্ভমুণ্ডে পড়ে ও গর্ভাধান সম্পন্ন হয়। এর ৩-৪ দিন পর ফুল থেকে ফল গঠন শুরু হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে একটি ফলের ভেতরে প্রায় ২০০০ বীজের গঠন চলতে থাকে। ফল পাকলে তা জলের উপরে ভেসে ওঠে ও ফেটে যায়। প্রাকৃতিকভাবে সেসব ফলের বীজ জলে ছড়িয়ে পড়ে ও বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত হয়। চারা তৈরি করতে চাইলে ফাটার আগেই পাকা ফল সংগ্রহ করে রোদে শুকালে তা ফেটে সরষে দানার মতো বীজ বেরিয়ে যায়। সেসব বীজ সংগ্রহ করে জলমগ্ন কাদায় ছড়িয়ে দিলে তা থেকে চারা তৈরি হয়।


চারা তৈরির দ্বিতীয় উপায় হলো এর মোথা বা গেঁড় থেকে। শাপলা গাছের গোড়ায় মাটির ভেতরে শিকড়শুদ্ধ এই মোথা বা রাইজোম থাকে। প্রাকৃতিকভাবে তা থেকে পুনরায় শাপলা গাছ জন্মে।  এসব গেঁড় তুলে আস্ত বা টুকরো করে কেটে লাগালে তা থেকে আবার নতুন গাছ জন্মায়। এ ছাড়া জলের নিচে এসব গেঁড় বা মোথা থেকে যেসব চারা বের হয় সেগুলো সাবধানে আলাদা করে লাগালে তা থেকেও নতুন গাছ জন্মায়। ধীরক্ষয় সম্পন্ন সার বা ট্যাবলেট সার মাটিতে পুঁতে প্রয়োগ করতে পারলে এসব চারা থেকে জন্মানো গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।


চাষাবাদ
অন্য ফসলের মতো এ দেশে শাপলা চাষ করা হয় না, প্রাকৃতিকভাবে জলাশয়ে প্রচুর জন্মে থাকে। বরং কখনো কখনো তা আগাছা হিসেবে আপদের মতো আবিভর্‚ত হয়। বাড়ির আশেপাশে পড়ে থাকা ডোবা বা জলাশয় থাকলে সেখানে শাপলা চাষ করে সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য নাইল উৎপাদন করা যেতে পারে, পুকুরেও চাষ করা যেতে পারে। উদ্যানের ছোট জলাশয়ে বা ডোবার পাঁকে সরাসরি মোথা বা কন্দ পুঁতে শাপলা জন্মানো যায়। আবার আলাদা একটি পাত্রে চারা জন্মিয়ে সেই পাত্রসহ চারাকে জলাশয়ের জলের তলায় মাটিতে পুঁতে দেয়া যায়। পুকুরে, পাত্রে ও জলোদ্যানে শাপলা চাষ করতে চাইলে নি¤œলিখিত ধাপসমূহ অনুসরণ করা যেতে পারে।


লাগানোর পাত্র ও স্থান নির্বাচন- সরাসরি কাদায় না পুঁতে পাত্রে গাছ লাগাতে চাইলে ১৪ থেকে ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাত্র নিতে হবে। মাটির পাত্র হলে ভাল। বাজারে মাটির যে গামলার মতো পাত্র কিনতে পাওয়া যায় ছিদ্রহীন সেসব পাত্র নেয়া যেতে পারে। ছাদে বা বাড়ির বাগানের কোন অংশে শাপলা ফোটাতে চাইলে নিতে হবে ২ থেকে ৩ ফুট ব্যাসযুক্ত মুখের বড় কোন পাত্র বা মাটির চাড়ি, যেরূপ চাড়ি বা পাত্রে গরুর খাবার দেয়া হয়। যে জলাশয়ে লাগানো হবে তার আয়তন যেন কমপক্ষে দুদিকে ৬-৮ ফুট হয়। কেননা, একবার লাগিয়ে অন্তত ৫ বছর পর্যন্ত বাগানে শাপলা ফুল ফোটানো বা নাইল উৎপাদন করা যায়। এ সময়ের মধ্যে শাপলা গাছের শিকড়ের বিস্তৃত হয় প্রায় ১৫ ফুট পর্যন্ত। ছায়ায় শাপলা ভাল হবে না- তাই রোদ পড়ে এমন জায়গা চাষের জন্য বেছে নিতে হবে।


পাত্রে চারা রোপণ- পাত্র সংগ্রহ  করার পর তার তলায় পুকুরের পাঁক বা কাদা কিছুটা দিয়ে তার মধ্যে শাপলার মোথা বা চারা পুঁততে হবে। কাদার সাথে কাদার চার থেকে পাঁচ ভাগের একভাগ পরিমাণ কেঁচোসার বা ভার্মিকম্পোস্ট মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। বিদেশে একোয়াটিক কম্পোস্ট ব্যবহার করা হয়, এদেশে এটা পাওয়া যায় না। এপ্রিল-মে মাস চারা লাগানোর উত্তম সময়। চারা লাগানোর পর পাত্র জল দিয়ে ভরে দিতে হবে। তবে জল ভরার আগে কাদার উপর পাতলা এক স্তর নুড়ি পাথর বিছিয়ে দিতে পারলে ভাল হয়। এতে কাদা গুলে জল নোংরা হবে না। পুকুরের তলার মাটিতে বা কাদায় সরাসরি মোথা পুঁতে দেয়া যায়।


পরিচর্যা- পাত্রের জায়গা ও কাদার পরিমাণ কম বলে গাছের খাবার পায় কম ও বাড়েও কম। পাত্র গভীর হলে ভালো। তাতে কাদার পরিমাণ বেশি দেয়া যায়। এক্ষেত্রে এ দেশে সিমেন্টের এক ধরনের স্যানিটারি রিং বিক্রি হয়। দু-তিনটি রিং জোড়া দিয়ে তলাটা ঢালাই করে বন্ধ করতে হবে। এভাবে শাপলা লাগানোর উপযোগী গভীর একটি পাত্র তৈরি করে নেয়া যায়। তবে কোনভাবেই সে পাত্র থেকে যেন জল না বের হয় সেভাবে নিñিদ্র করতে হবে। কাদার ভেতরে ৩-৪টি ট্যাবলেট সার পুঁতে দিলে এক বছরের জন্য আর কোন সার দিতে হবে না। এছাড়া কাদার ভেতরে বিভিন্ন রাসায়নিক সার মিশিয়ে তা বল বানিয়ে রোদে শুকিয়ে সেসব বল বছরে ২-৩ বার পাত্রের কাদার মধ্যে পুঁতে দেয়া যায়। জলাশয়ের কাদাতেও এরূপ সারের বল পুঁতা যায়। এতে গাছের বাড়-বাড়তি বেশি হয় ও ভালো ফুল ফোটে। পাত্র বা জলাশয়ের জল কমে গেলে জল দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ বছর পর পর পাত্র বা জলাশয়ের সব গাছ উপড়ে ফেলে আবার কাদাতে সার মিশিয়ে তৈরি করে  পুনরায় শাপলা গাছ লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে যে রঙের শাপলা ছিল তার বদলে অন্য রঙের বা জাতের শাপলা লাগিয়ে জলজ বাগানে বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে।

মৃত্যুঞ্জয় রায়

প্রকল্প  পরিচালক, সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোন্টে অঙ্গ (২য় পর্যায়) প্রকল্প, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, মোবা : ০১৭১৮২০৯১০৭, ই-মেইল : Kbdmrityun@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon